হাত দেখতে শুরু করার সময়, প্রথমে যে সব বিষয় দেখতে হবে, তার মধ্যে একটি প্রধান বিষয়। হাতের আঙুল। আঙুলের নখ, চন্দ্রমা, নখের গঠন প্রভৃতি নানা বিষয় শিক্ষা করতে হবে। হাতে মোট পাঁচটি করে আঙুল থাকে। আবার অনেকের হাতে একটি অতিরিক্ত আঙুল ও দেখা যায়। বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ায় বা কণিষ্ঠার গোড়ায় অবশ্য তা কোটিতে একজন। কিনা সন্দেহ। যাদের এরকম থাকে তারা খুব পরিশ্রমী হয় এবং যেমন করে হোক জীবন। সংগ্রামে জয় লাভ করে।
সাধারণ পাঁচটি আঙুল হলোঃ
১। বৃদ্ধাঙ্গুলি বা বুড়ো আঙুল
২। তর্জনী বা নির্দেশক আঙুল
৩। মধ্যমা বা মাঝের আঙুল
৪। অনামিকা বা আংটি পরার আঙুল
৫। কণিষ্ঠা বা কড়ে আঙুল
১। বৃদ্ধাঙ্গুলি বা বুড়ো আঙুল: হাতের চারটি আঙুল একসঙ্গে থাকে, কিন্তু এটি থাকে পৃথক। এটি সবচেয়ে মোটা আঙুল। অন্য সব আঙুলে দুটি গাঁট ও তিনটি পর্ব থাকে। কিন্তু বুড়ো আঙুলে একটি গাঁট ও দুটি পর্ব থাকে। এটি শক্ত এবং রাহুর ক্ষেত্রের উপরে দন্ডায়মান।
২। তর্জনী বা নির্দেশক আঙুল: আমরা এই আঙুল দ্বারা কোন দিক বা কোন কিছু নির্দেশ করি। এটি বৃহস্পতির ক্ষেত্রের উপরে বলে একে বৃহস্পতির আঙুল বলে।
৩। মধ্যমা বা মাঝের আঙুল: পাঁচটি আঙুলের ঠিক মাঝে এটি এবং এটি সবচেয়ে লম্বা আকারের হয়। এটি শনির ক্ষেত্রের উপরে বলে একে শনির আঙুলও বলা হয়।
৪। অনামিকা বা আংটি পরার আঙুল: কণিষ্ঠার ঠিক পরের আঙুলটি হলো অনামিকা। এটি রবির ক্ষেত্রের উপর অবস্থিত বলে একে রবির আঙুলও বলা হয়।
৫। কনিষ্ঠা বা কড়ে আঙুল: অনামিকার পরের আঙুলটি কনিষ্ঠা আঙুল। এখানে বুধ গ্রহের অবস্থান।
আঙুলের পর্ব
আঙুলকে তিন ভাগে ভাগ করলে তার এক একটি ভাগকে বলে পর্ব। হস্তরেখা পরীক্ষা করার সময় আঙুলের পর্ব বেশ ভালভাবে পরীক্ষা করতেই হবে। তার সঙ্গে দেখতে হবে নখ। নখগুলি সরু না বেঁটে, সরল না ছ্যাদরানো, সাদা, হলুদ, বাদামী, নীলচে না ধূসর এসব বেশ ভালভাবে দেখতে হবে।
মানুষের জীবনের ভবিষ্যৎ বলতে গেলে এই সবগুলি প্রয়োজন। আঙুলের প্রথম পর্ব সাধারণতঃ, জাতকের প্রকৃত জ্ঞান ও ধর্মভাব বিষয়ে জ্ঞাত করায়। আঙুলের ‘দ্বিতীয় প্রেম, প্রীতি, স্নেহ, ক্ষমতা, ভালবাসা, ইত্যাদি সুকুমার প্রবৃত্তির বিষয়ে জ্ঞাত করায়।
আঙুলের তৃতীয় পর্ব জেদ, একগুঁয়েমি, হঠকারিতা, অন্যের উপরে প্রভুত্ব করার ইচ্ছা প্রভৃতি নির্দেশ করে। বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচের পর্বটিই মাঝামাঝি একটি দাগ দ্বারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়।
কণিষ্ঠা আঙুল
কণিষ্ঠা আঙুলকে বলা হয় বুধের আঙুল। এটি থেকে বুধের ক্রিয়া জানা যায়। আবার এর তিনটি পর্ব হলো আগা থেকে গোড়ার দিকে মকর, কুম্ভ, ও মীনরাশির স্থান। এই আঙুলের গঠন দীর্ঘ, সুন্দর ও সুডৌল হলে এটি নির্দেশ করে জাতকের প্রকৃতি হবে শিশুর মত সরল, কিন্তু তার মনের মাঝে গোপন প্যাঁচ থাকা অসম্ভব নয়।
কনিষ্ঠের পর্ব বিচার:
কণিষ্ঠার প্রথম পর্ব- জ্ঞান, বিদ্যা, সাধনা বোঝায়।
কণিষ্ঠার দ্বিতীয় পর্ব- ব্যবসা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও রসায়ন সংক্রান্ত বিষয় বোঝায়।
কণিষ্ঠার তৃতীয় পর্ব- প্রেম, ভালবাসা, মায়া মমতা ও রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয় বোঝায়।
এই কণিষ্ঠা আঙুল বিচার করতে শিখলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক লোকের হাত দেখা অনেক সহজ হয়। অবশ্য তার সঙ্গে তার সফলতা ও বিফলতা বিচার করতে হবে। তার জন্য হাতের সব মাউন্ট এবং সৌভাগ্যকারী রেখা প্রভৃতি বিচার করতে হবে। আবার রাজনৈতিক জীবনে সফলতা অনেক সময় বোঝা যায় সুগঠিত কণিষ্ঠ থেকে।
অনামিকা আঙুল
এটি হলো রবির আঙুল। কিন্তু হস্তরেখা বিচারে রবি হলো সমস্ত গ্রহের কেন্দ্রস্থল এবং যশ, সৌভাগ্য, উন্নতি ও জীবনকে উজ্জ্বল করে তোলার একমাত্র শ্রেষ্ঠ গ্রহ। রবিক্ষেত্র দেখেই শুধু রবিকে চেনা বা বোঝা যায় না। এই অনামিকা আঙুল তাকে চিনতে ও বুঝতে অনেক সাহায্য করে। এই আঙুলের অগ্রভাগ থেকে নিচের দিকে বা গোড়ার দিকে তিনটি পর্বে যত্রক্রমে কর্কট, সিংহ ও কন্যারাশির অবস্থান। এর অর্থ হলো এ তিনটি রাশির সুফল ও কুফল বোঝা যায় এই আঙুলের তিনটি পর্ব থেকে।
রবিই একমাত্র গ্রহ যা সৌরমন্ডলের মূল আধার। এর সাহায্য না পেলে মানব জীবনের সৌন্দর্য, জীবন-আদর্শ, শিল্পচিন্তা ও মননশক্তি, স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব, সরকারী কাজ, চাকুরীতে উন্নতি, জীবনে প্রতিষ্ঠা, চক্ষু সংক্রান্ত রোগ প্রভৃতি বিষয়ে বিচার করা সম্ভব হয় না। এক কথায় রবির নির্মল আলোতে মানব জীবনের অন্ধকার দূরীভূত হয়ে দীপ্তিমান হয়ে ওঠে। এই আঙুল সুন্দর ও সুগঠিত হলে যেমন শুভ তেমনি এটি বাঁকা হলে তার জীবনে চরম ব্যর্থতার সূচনা করে। সবল সরল অনামিকা হলেও তা পুরু হলে এবং সেই সঙ্গে রবির স্থানটি উচ্চ হলে ও সুন্দর রবি রেখা থাকলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে উন্নতি হয় ও সুনাম, প্রতিষ্ঠা, অর্থ সব কিছু আসে এবং সে একজন যশস্বী ব্যক্তি হিসাবে বিখ্যাত হয়। এবং অনেক কুগ্রহের প্রভাব ও জাতক সহজে কাটিয়ে উঠতে পারে।
অনামিকার প্রথম পর্ব (আগার পর্ব) নির্দেশ করে বুদ্ধি।
অনামিকার দ্বিতীয় পর্ব নির্দেশ করে বুদ্ধির বিকাশ, প্রকাশ এবং সাফল্য।
অনামিকার তৃতীয় পর্ব নির্দেশ করে জলপথে ভ্রমণ, সমুদ্রযাত্রা, জলজ দ্রব্যের ব্যবসা
নৌবাহিনীতে কর্ম, জলপথে উন্নতি।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অনামিকার প্রথম পর্ব দীর্ঘ ও সুগঠিত হলে জাতক আইনজ্ঞ হতে পারে। দ্বিতীয় পর্ব দীর্ঘ হলে জাতক লেখক, কল্পনাপ্রিয়, ভাবুক ও শিল্পজ্ঞানের অধিকারী হয়।
মধ্যমা আঙুল
মধ্যমা আঙুলিটি হলো শনির আঙুল। এই আঙুল সব থেকে বড়, সব থেকে স্বতন্ত্র। এটি যেন নিজের দৃপ্ত তেজে পূর্ণ। এই আঙুল ছোট হলে জাতকের মাথায় গোলমাল হতে পারে বা সে এক ধরনের পাগল হতে পারে। পূর্ণ উন্মাদ হওয়াও বিচিত্র নয়। যদি এই আঙুল বাঁকা হয় তাহলে জাতকের মৃগী, হাঁপানি বা কোনও কিছু দুর্ঘটনায় তার অঙ্গহানি হতে পারে।
এই আঙুল ছোট ও বাঁকা হলে তার প্রকৃতি হয় অসংযত। এইরূপ জাতক বেশি কথা বলতে ভালবাসে না। তারা হয় মিতভাষী বাকা ইঙ্গিতে কথাবার্তা বলতে এরা ভালবাসে। এই আঙুলে যে তিনটি রাশির অবস্থান তা হলো আগা থেকে গোড়ার দিকে তুলা, বৃশ্চিক ও ধনু।
মধ্যমার পর্ব বিচার
মধ্যমার প্রথম পর্ব: এই পর্ব স্বাভাবিক হলে, জাতক ধার্মিক, ধীর, গম্ভীর, চিন্তাশীল ও গুপ্তবিদ্যায় পারদর্শী হয়। মধ্যমার প্রথম পর্ব অসাধারণ বড় হলে জাতক হয় নৈরাশ্যভাবাপন্ন।
মধ্যমার দ্বিতীয় পর্ব: এটি স্বাভাবিক হলে, জাতক জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে ও পশুপালনে দক্ষ হয়। এই পর্ব বেশি দীর্ঘ হলে হয় লম্পট, কামুক ও হিংসুটে।
মধ্যমার তৃতীয় পর্ব: এটি স্বাভাবিক থাকলে জাতক হয় সংযমী, স্বাধীনতাপ্রিয় ও গণিতে পারদর্শী। এই জাতক জীবনে প্রায় সব ক্ষেত্রেই সুখী ও যশস্বী হয়। সে সঞ্চয়ী হয়। কিন্তু ঐ পর্ব অন্য পর্বের থেকে বেশি হলে জাতক হয় দাম্ভিক, পরশ্রীকাতর, কামুক ঝগড়াটে। এই পর্ব যাদের দীর্ঘ তারা ভূ-বিজ্ঞান খনি সংক্রান্ত বিষয় প্রভৃতিতে অসীম জ্ঞান দেখাতে পারে।
তর্জনী আঙুল
তর্জনী আঙুলকে বলা হয় বৃহস্পতির আঙুল। এটি স্বাভাবিক ও পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে অনামিকার থেকে সামান্য বড় হয়। কখনো বা তা অনামিকার সমান হয়।
এই আঙুলের অধিকর্তা বৃহস্পতি। এই বৃহস্পতি, যশ, ন্যায়নিষ্ঠতা, ধর্ম ও সৎপথে জীবনের উন্নতিকারক।
বৃহস্পতি আদেশকারক দেবগুরু। তাই এই আঙুল আদেশকারীর বার্তা বহন করে। আবার এটি নির্দেশক আঙুল- নির্দেশ করে থাকে।
যদি তর্জনী অনামিকার সমান হয়, তবে তা অতি দাম্ভিকতা ও অতিরিক্ত উন্নতিকামিতা সূচনা করে। সম্রাট নেপোলিয়নের তর্জনী ও এমনি সমান লম্বা ছিল। তর্জনী বাঁকা বা তার গঠন খারাপ হলে জাতক অসৎ প্রকৃতির হয় এবং উন্নতিতে বাধা পায় (তার জীবন বাধাবিঘ্নপূর্ণ হতে পারে এমনি কি জীবন পর্যন্ত ধ্বংস হতে পারে। তর্জনীতে আগা থেকে গোড়ার দিকে মেষ, বৃষ, মিথুন রাশির অবস্থান।
তর্জনীর পর্ব বিচার
তর্জনীর প্রথম পর্বে- মান, অপমান।
তর্জনীর দ্বিতীয় পর্বে- পদমর্যাদা ও দৈহিক শক্তি।
তৃতীয় পর্বে- মানসিকবল, ইচ্ছাশক্তি, বিচারশক্তি।
বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার বিস্তৃত বিচার
বৃদ্ধাঙ্গুলি বিচার জ্যোতিষশাস্ত্র বা হস্তরেখার একটি বিশেষ অংশ বলা যায়। বিখ্যাত পাশ্চাত্য (ফরাসী) জ্যোতিষী রেনীর মতে কোনও লোকের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখেই সেই লোকটির প্রকৃতি নিখুঁতভাবে অনুধাবন করা যায়। শুধু হাতের গঠন বিচারেই নয়, রেখা বিচারেও এর বিশেষ প্রয়োজন আছে। বৃদ্ধাঙ্গুলির বিচারে পূর্ণ জ্ঞান না থাকলে অনেক কথাই নির্ভুলভাবে বলা যায় না।
কেবল হাত দেখার ব্যাপার নয়, পৃথিবীর নানা দিকে নানা কাজে, বৃদ্ধাঙ্গুলির বিশেষ গুরুত্ব বা প্রয়োজন আছে। বৃদ্ধাঙ্গুলি হলো ঈশ্বরের প্রতীক। এই প্রথম অঙ্গুলি ঈশ্বরের ইচ্ছার নির্দেশ বোঝায়। হাতের মধ্যে এই আঙ্গুলটির স্থিতি এমন যে, এটি স্বাধীনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। লেখা, ছবি আঁকা, কারুকার্য, ভাস্কর্য, সব কিছুতেই এটি প্রধান অবলম্বন। দ্বিতীয় আঙুল হলো পবিত্র আত্মার প্রতীক এবং সে প্রথম আঙুলের হুকুম পালন করে।
চিকিৎসাশাস্ত্রেও বৃদ্ধাঙ্গুলির একটি পৃথক কেন্দ্র আছে, যা থেকে স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন, কারও এই রোগ হয়েছে কিনা। শরীরের অন্য কোথাও রোগ হবার আগে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখে তাঁরা বলতে পারেন। এই রোগীর স্নায়ুরোগ হয়েছে কিনা। পক্ষাঘাত রোগের একটি নির্দিষ্ট লক্ষণই জানায় এই বৃদ্ধাঙ্গুলি। একজন অপরাধ বিজ্ঞানী একবার লন্ডনে প্রমাণ করে দেখান যে, বৃদ্ধাঙ্গুলির ভাঁজ পরীক্ষা করে সঠিকভাবে বলা যায়, লোকটি অপরাধী কিনা।
আদালতে সব সময় বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপা নেওয়া হয় কারণ এটা হলো মানুষকে চিনে নেবার সবচেয়ে সুনির্দিষ্ট চিহ্ন। শিশুর কৃদ্ধাঙ্গুলি যদি পুষ্ট না হয়, তাহলে চিকিৎসকরা শিশুটি অপুষ্ট বলে মনে করেন। যাদের মন দূর্বল, তাদের এই আঙুল হয় দূর্বল। তারা কোনও কাজে নিজের উপর ভরসা রাখে না। মুমূর্ষ লোক যখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়, তখন তাদের বুড়ো আঙুল ক্ষীণ হতে থাকে। তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। বৃদ্ধাঙ্গুলি নেতিয়ে পড়লে রোগীর জীবনাশংকা নির্দেশ করে। রোগী বাঁচার বিশেষ যস্তাবনা থাকে না।
একজন বিশিষ্ট কররেখাবিদ বলেন যে, এই বৃদ্ধাঙ্গুলি মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্দেশ করে। বিজ্ঞানীরাও একে পূর্ণ সমর্থন করেন। বৃদ্ধাঙ্গুলি হাতের সঙ্গে সমকোণ গঠন করে খাড়া থাকলে বা কোন একদিকে হেলে থাকলে তা শুভফল দেয়; এই ধরনের বৃদ্ধাঙ্গুলি ভাল বলা যায়। যদি বৃদ্ধাঙ্গুলি হাতের সঙ্গে সমকোণ করে খাড়া থাকে, জাতক চরম স্বাধীনতা প্রিয় হয়। এই রকম লোক নিয়ে কাজকর্ম করা বা এদের বশে রাখা একটা কঠিন ব্যাপার। এরা কোন বাধা সহ্য করে না। এদের ভাব হলো যেন সব সময় চড়াও হওয়া কিন্তু তাতে ভাল হয় না।
যদি বৃদ্ধাঙ্গুলি সুগঠিত হয় কিন্তু তা দুমড়ে করতলে পড়ে থাকে এই শ্রেণীর জাতকের মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির খুব অভাব। এরা অন্যের মতে চলে। এদের চট্ করে নিজের দলে টেনে আনা যায়। এদের মত অতি সহজে পাল্টে ফেলা যায়। এরা প্রায়ই একমতে বেশিক্ষণ বজায় রাখতে পারে না। নিজের মতের প্রাধান্য দিতে পারে না। এরা হয় দুর্বলচেতা ও ভীরু কিন্তু খুব সাবধানী হয়। এই জাতক কি চিন্তা করছে বা কি কাজ করার কথা ভাবছে তা জানা অসম্ভব। খেলাধূলা করা, হৈচৈ করা, বেশি কথা বলা, এদের স্বভাব নয়। এরা তা পছন্দও করে না।
যদি বৃদ্ধাঙ্গুলি লম্বা হয় তা হলে জাতক কৌশলের দ্বারা তার কার্যসিদ্ধি করে নেয়। এরা
বুদ্ধির জোরে এবং কৌশলে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে।
যদি বৃদ্ধাঙ্গুলি মোটা ও খর্ব হয়, তাহলে সে সতর্কতার সঙ্গে সুযোগের প্রতীক্ষায় থাকে। সে চেষ্টা করে বলপ্রয়োগ করে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিতে। বুদ্ধির কৌশলের থেকে বাহুবলই তার প্রধান ভরসা বলে মনে হয়।
যদি এটি মাঝারি গঠনের হয়, তাহলে সেটি হয় সব থেকে ভাল। জাতক উপযুক্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির বলে দৃঢ় চরিত্র এবং মর্যাদা লাভ করে। জাতক নিজের দিকেও যথেষ্ট সতর্ক থাকে। তার ইচ্ছাশক্তি, দৃঢ়তা এবং নির্ভুল সিদ্ধান্ত করার ক্ষমতা থাকে। তাহলে মূল কথা হলো- লম্বা সুগঠিত বৃদ্ধাঙ্গুলি। ভাল-মন্দ বিচারের শক্তিযুক্ত উদ্যম সূচনা করে। স্কুল খর্ব বৃদ্ধাঙ্গুলি পশুর মতো শক্তি ও গোঁয়ারতুমি প্রকাশ করে। ছোট দুর্বল বৃদ্ধাঙ্গুলি হলে উদ্যম ও ইচ্ছাশক্তির অভাব বোঝায়।
অতি প্রাচীন কাল থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যে তিনটি
শক্তিতে জগৎ চলছে। তা হলো প্রেম, যুক্তি এবং ইচ্ছাশক্তি।
প্রথম বা নখের পর্ব-ইচ্ছাশক্তি বোঝায়।
দ্বিতীয় পর্ব– যুক্তিতর্ক।
তৃতীয় পর্ব– শুক্রের স্থান। এটি প্রেমের ক্ষেত্রও বটে এ থেকে প্রেম সূচনা করে। যদি বৃদ্ধাঙ্গুলির দুটি পর্ব অসমান থাকে, প্রথম পর্ব বেশি লম্বা হয়। তাহলে জাতক যুক্তি বিবেচনার ধার ধারে না। কেবল ইচ্ছাশক্তির বশে চলে। এটি ভাল লক্ষণ নয়।
বৃদ্ধাঙ্গুলি নখের লম্বা লম্বা ( | ) দাগ সূচিত করে জাতক খুব বেশি কামুক, শুক্রপাত করে বেশি, নেশা করে। জাতিকার পক্ষেও এগুলি অন্যভাবে খাটে। এদের স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও হৃদ-দুর্বলতা থাকতে বাধ্য। আবার যদি এর নখের অন্যভাবে লম্বা দাগ হয়- তাহলে শ্বাসযন্ত্র, হজমযন্ত্র, যৌনযন্ত্র, প্রভৃতির দুর্বলতা থাকে।
বৃদ্ধাঙ্গুলির চারটি ভাগঃ-
১। নমনীয় বৃদ্ধাঙ্গুলি, ২। অনমনীয় বৃদ্ধাঙ্গুলি, ৩। মোটা বা গদার মতো বৃদ্ধাঙ্গুলি, ৪। চিকন কটিযুক্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি।
নমনীয় বৃদ্ধাঙ্গুলি: এই ধরনের বৃদ্ধাঙ্গুলি যাদের তারা উদার, মহান, হাসিখুশি, সৎভাবযুক্ত ও তাদের স্বভাব মধুর হয়। এদের প্রতি সকলে আকৃষ্ট হয়। খুব সহজে এরা সব স্থানে ও সব পরিবেশে নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারে। এরা নিজের মতকে যেমন গুরুত্ব দেয় তেমনি অন্যের মতবাদকেও অস্বীকার করে না বরং শ্রদ্ধা করে থাকে। এরা সব কথা গভীরভাবে চিন্তা করে। তা না করে এরা কিছু স্বীকার করে না। আবার প্রতি বিষয় ঠিক ন্যায়সঙ্গতভাবে বা তার্কিকভাবে চিন্তা করে তাদের মতামত স্থাপন করে।
কুসংস্কার এদের মধ্যে কম থাকে। তবু প্রাচীন সংস্কারের যা ভাল এরা গ্রহণ করে। যা মন্দ তাকে আমল দেয় না। সব বিষয়ে সংস্কারের ভালটুকু এরা গ্রহণ করে। অনাবশ্যক অংশকে পাত্তা দেয় না। এরা বেশ সামাজিক হয় বলে সবার সঙ্গে সুন্দর ভাবে খাপ খাইয়ে নেয়।
এরা সদালাপী; তবে এরা অন্যায় দেখলে হঠাৎ রেগে যায় যদিও রাগ বেশিক্ষণ থাকে না।
প্রেম, প্রীতি ও জনসেবার কাজে এদের গভীর আগ্রহ। বৃদ্ধাঙ্গুলি যদি হেলানো হয় তবে তাদের শিল্পী, গায়ক, অভিনেতা, বড় খেলোয়াড় শিক্ষক প্রভৃতি হওয়ায় দিকে আকর্ষণ থাকে। যার বৃদ্ধাঙ্গুলির মূলস্থান হাতের যত কাছে থাকে, সে হয় তত কৃপণ বা কঞ্জুস প্রকৃতির। যদি বৃদ্ধাঙ্গুলি হাতের চেটো থেকে দূরে থাকে। সে হয় অমিতব্যয়ী। তারা পয়সাকে পয়সা বলে জ্ঞান করে না।
হাতের প্রত্যেক আঙুল যদি কম ফাঁক থাকে বা কাছাকাছি থাকে তবে ধনী, মানী, মিতব্যয়ী হয় এবং জীবনে প্রচুর টাকা উপার্জন ও সঞ্চয় করে।
অনমনীয় বৃদ্ধাঙ্গুলি: যাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি অ-নমনীয় তারা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়। চট্ করে কারও কথায় বিশ্বাস করে না। সহসা কারও যুক্তি গ্রহণ করে না। হঠাৎ কারও সঙ্গে আলাপ করে না বা কাউকে হঠাৎ বিশ্বাস করে না। তবে যাকে বিশ্বাস করে, তার প্রতি সহসা বিমুখ হয় না বা তাকে হঠাৎ অবিশ্বাস করে না। এরা হয় বাস্তববাদী, স্বার্থপর, প্রশংসাপ্রিয় এবং চাপা ধরনের আত্মকেন্দ্রিক লোক। এদের কোন কাজ সমাপ্ত করতে একটু বেশি সময় লাগে। এরা চাপা এবং নিজেদের খুব বড় বলে মনে করে থাকে। আদর্শ ছাড়া এরা বাঁচতে পারে না। চলতে পারে না। এদের আদর্শ সব সময় সঠিক হয়। আদর্শের জন্য প্রাণ দিতেও পারে।
মোটা বা গদার মতো বৃদ্ধাঙ্গুলি: এই ধরনের বৃদ্ধাঙ্গুলি খুব ভাল নয়। এদের মোটা ও থ্যাবড়া বৃদ্ধাঙ্গুলি নির্দেশ করে যে, এদের চরিত্রভাব মোটা ও থ্যাবড়া। অর্থাৎ কর্কশ, রুঢ়ভাব বেশি থাকবে। এমন কি অপরাধী, খুনী, ডাকাত, নারীধর্ষক প্রভৃতিও হতে পারে। বিকৃত ও অস্বাভাবিক ভাব বেশি দেখা যায়। যৌন বিকৃতি দেখা যেতে পারে। এরা শ্লীলভাষায় চেয়ে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে ভালবাসে। লোককে কষ্ট দিয়ে ও অন্যায় করে একটা বিচিত্র আনন্দ পায়। সৎ পথে একশো টাকা উপার্জন ছেড়ে অন্যায় পথে পঞ্চাশ টাকার জন্য এরা লালায়িত হতে পারে।
এদের ব্রেনকে বা বুদ্ধিকে যারা দখল করে। তারা এদের দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে নিতে পারে। কারণ প্রাণ দিতে বা নিতে এরা কসুর করে না। এদের গভীর চিন্তাশক্তি, বিবেক বুদ্ধি, হিতাহিত বোধ প্রভৃতি কম থাকে। অনেক মজুর, কারবারী, রিচালক, মুটে প্রভৃতির হাতের আঙুল এমনি হয়।
চিকন কটিযুক্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি: বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বিতীয় পর্বের গোড়া সরু হয়ে আবার হাতের সঙ্গে সন্ধিতে মোটা হয়ে যায় যাদের তাদের বলে চিকন কটিযুক্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি। যাদের এমন থাকে। তারা খুব চালাক চতুর, বুদ্ধিমান, বিদ্বান ও অভিজ্ঞ হয়। এদের মাথায় জটিল বুদ্ধি বেশি হয়। সহজে এদের কেউ ঠকাতে পারে না। এদের প্রতি নারীদের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকে। এরা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক বলে সহজে এদের উপরে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারে না বা আধিপত্য করতে পারে না।
এরা খুব দায়িত্বশীল হয় যে কাজের ভার নেয় তা পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এবং কাজ ঠিকমতো সম্পন্ন করে এরা লোকের প্রীতি উৎপাদন করে। অনেক সময় প্রথম জীবনে এরা সফল হয় না। তবে পরবর্তী জীবনে এরা সফল হয় ও উন্নতি করে। যেমন করেই হোক শেষ জীবনে এরা অবশ্য সুখী হয়। এটা তাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই বলা যায়।
ছুঁচালো আঙুল
যাদের আঙুলের অগ্রভাগ সরু বা ছুঁচালো হয়ে থাকে। তারা খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক হয়। তারা স্বাস্থ্য বেশ ভাল থাকে। তাদের স্মৃতিশক্তি বেশ প্রবল হয়। তাদের মধ্যে একটা দাম্ভিক ভাব থাকাও সম্ভব। কোথায় কিভাবে চলতে হবে ও কথা বলতে হবে, তা তারা। বেশ ভাল বোঝে।
গাঁটালো আঙুল
যাদের আঙুল গাঁট গাঁট হয় তাদের আঙুলের নখের মধ্যে একটা দার্শনিক ভাব দেখা যায়। দর্শনশাস্ত্র এদের প্রিয় হয়। আধ্যাত্মভাব এরা ভালবাসে। এরা বেশি ভোগ-বিলাস চায় না। এরা বিরাট বংশের লোক হতে পারে। যে পথেই এরা চলুক না কেন, রক্ষণশীল ভাব, প্রাচীন সংস্কার, ঈশ্বর আরাধনা প্রভৃতি ভালবাসে। ঈশ্বর বিশ্বাসী মতবাদ নিয়ে উচ্চ ভাবনার দিকে জীবন কাটালে এরা পরম উন্নতি করে।
এই সঙ্গে যদি হাতে মিষ্টিক ক্রশ ও দৈবরেখা প্রভৃতি থাকে তাহলে এরা ঐ পথে আরও বিরাট উন্নতি করতে সক্ষম হয়। ভগবান বুদ্ধ, শঙ্করাচার্য, রামকৃষ্ণ, নানক, কবীর প্রভৃতির হাত এমনি ছিল। দার্শনিক বাট্রা’ রাসেলের হাত ও জর্জ বার্নার্ডশ এর হাত এই ধরনের ছিল। কিন্তু উচ্চ মন ছাড়া সাধারণ লোকের হাতে এ ধরনের রেখা শুভ নয়। এদের স্বার্থপর, সন্দেহপ্রবণ, রুক্ষভাবযুক্ত, ভন্ডভাবযুক্ত জগতের সাথে মতের মিল হয় না। তার ফলে জীবনে পদে পদে বাধা আসতে পারে।
এদের পেটের নানা গোলমাল হয়। দৃষ্টি শক্তি খুব কম হয়ে থাকে। লিভারের দোষ হতে পারে। এরা আত্মীয় বন্ধু সবার সঙ্গে খুব বেশি হিসাব করে চলে ও কথা বলে এবং তাদের প্রতিটি বিষয় বিচার করে। এরা জীবনে আত্মীয় স্বজন থেকে অদ্ভুত ও নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। প্রায়ই আত্মীয়দের সঙ্গে মতের মিল হয় না। দাম্ভিকতারভাব প্রচুর থাকে। তবে যে সব আত্মীয়ের সঙ্গে এদের মতের মিল হয় তাদের সঙ্গে অবশ্য খুব বেশি ভাব থাকে।
এদের জীবনে উন্নতির পথ খুবই বাধা বিঘ্নময় হয়। গাঁটহীন আঙুলের লোকের থেকে এরা বেশি চালাক, বুদ্ধিমান, লোক চরিত্রে অভিজ্ঞ হয়। কিন্তু বেশি কুটিল হয় বুধের স্থান বেশি উন্নত হলে এরা বাইরে সদালাপী ভেতরে কুটিল হয়। এদের দায়িত্ববোধ খুব বেশি থাকে। চিন্তা-ভাবনা না করে এরা কোন কাজে হাত দেয় না। এদের মনে আবেগ কম থাকে। সত্যনিষ্ঠ ও দৃঢ়তা থাকে অনেক বেশি। এরা সময় সব বিষয় নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায়। বড় বড় নেতা ও সংগঠনকারী এরা হতে পারে।
চৌকো আঙুল
যাদের আঙুল চৌকো হয়, তারা হয় বাস্তববাদী এবং মূলতঃ খুব কাজের লোক। এরা সব সময় বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজে এগিয়ে যায়। এরা জড়বাদী। পার্থিব জিনিসে এদের বিশ্বাস। আধ্যাত্মিক ভাব বা ধর্ম, ঈশ্বর এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। কল্পনা, আদর্শবাদ প্রভৃতির দিকেও তত আগ্রহী নয় এরা। বাইরের জগতের দিকে মাথা ঘামাতে ভালবাসে না।
তবে মাঝে মাঝে স্বপ্ন এসে এদের মনকে অধিকার করতে পারে। তা যদি হয় তা হলে এদের মনে অনর্থক শুধু অশান্তি বা কষ্ট আসে। কাজেই সে পথে এদের না যাওয়াই ভাল। এরা কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তাই বেশি আদর্শবাদ নিয়ে জীবনে কষ্টবরণ করা এদের পক্ষে যুক্তিযুক্ত নয়। এরা যত বাস্তববাদী হবে এবং ভাল কর্মী হবে ততই এদের উন্নতি হবে।
শিল্প বাণিজ্যের পথে গেলে এদের উন্নতি হয়। বিজ্ঞানের দিকে গেলেও এরা প্রচুর উন্নতি করতে পারে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ণ, গণিত, ভূবিদ্যা, মহাকাশবিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উন্নতি করে। এরা বড় ডাক্তার ও ভাল সার্জন হতে পারে। বড় আইনজ্ঞও হতে পারে।
মাঝে মাঝে এদের মধ্যে বাস্তববাদী মৌলিক চিন্তা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এরা খুব উন্নতি করে। জাতীয়তাবাদী কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে এমন আঙুল দেখা যায়।
মার্শাল স্ট্যালিন, আকাশচারী গ্যাগারিন এভারেষ্ট বিজয়ী শেরপা তেনজিং, বিপ্লবী লেনিন প্রভৃতির এমনি আঙুল ছিল। অনেক বড় জড়বাদী পণ্ডিতদের এই ধরনের আঙুল ছিল। এদের আঙুলের দৈর্ঘ্য চেটোর থেকে ছোট হলে প্রচুর প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও এরা তা ঠিক মতো প্রকাশ করতে পারে না। জীবনযুদ্ধে এরা সহজে সফল হতে পারে না। কিন্তু আঙুলের দৈর্ঘ্য চেটোর সমান বা বড় হলে এরা খুব সফলতা লাভ করে।
মোটা আঙুল
যাদের আঙুল মোটা, গোড়া গোল, মাথা সরু এবং নখের রং গোলাপী হয় সেই পুরুষ বা নারী ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী হয়। ভোগী এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রিয় হয়। গান-বাজনা ছবি- আঁকা, হাতের কাজ ভাল করতে পারে। মোটা আঙুল গাঁটযুক্ত হলে তারা আধ্যাত্মিক পথে ও উচ্চশ্রেণীর রচনাদির ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে। মোটা আঙুল চৌকো ধরনের হলে তাদের জীবনে বাস্তব পথে উন্নতি হতে পারে।
লম্বা আঙুল
যাদের আঙুল লম্বা এবং মধ্যমার দৈর্ঘ্য করতলের চেটো সমান বা বড় হয়, তাদের ব্যবহার অমায়িক এবং আবেগময় হয়। তারা লোকের সঙ্গে খুব বেশি মেশার চেষ্টা করে থাকে। এরা কাব্য, শিল্পকলা, সাহিত্য, নাটক প্রভৃতিতে উন্নতি করে। সূঁচালো লম্বা আঙুল চৌকো ধরনের হলে তাদের জীবনে বাস্তব পথে খুব উন্নতি হতে পারে। গাঁটালো লম্বা আঙুল আধ্যাত্মিক বা উচ্চ আর্দশে উন্নতি করতে চেষ্টা করে। বেশি বয়সে এদের সফলতা আসতে পারে। চৌকো আঙুল লম্বা হলে তারা বাস্তব জীবনে খুব সফলতা অর্জন করে।
ছোট আঙুল
যাদের আঙুল ছোট, মধ্যমা করতলের থেকে অনেক ছোট হয়, তাদের আয়ু খুব বেশি হয় না। এদের কামভাব কম থাকে। নারী হলে কামশীলতা হয় এবং খুব চাপা স্বভাবের হয়। এদের প্রকৃতি কেউ সহজে বুঝতে পারে না। এরা সুখ-দুঃখে সমভাবে প্রকাশ করে। এদের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে কলহ প্রায়ই লেগে থাকে। অহংকার অভিমান এদের বেশি থাকে। আঙুল খুব ছোট হলে সন্তান সংখ্যা কম হয়।
মিশ্র আঙুল
অনেক সময়ই জাতকের মিশ্র আঙুল দেখা যায়, হয়তো দুটি আঙুল গাঁটালো, দুটি চৌকো কিংবা চারটি আঙুল তিন রকম আকারের। এরা মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতায় ভোগে। এদের মন ভীষণ চঞ্চল ধরনের হয়। এরা বাস্তব পথে এগোতে চায়। কিন্তু নানা বাধা এসে অনেক সময় কাজ ব্যহত করে। সব মিলিয়ে এদের জীবন উত্থান পতনে মিশ্রিত। সাফল্য এলেও তা দেরীতে আসে। অনেক সময় সারা জীবন সংগ্রামেই কেটে যায়।
পাঁচ আঙুলে চৌদ্দ পর্বের সামুদ্রিক বিচার
পূর্বেই বলা হয়েছে আঙুলকে তিনভাবে ভাগ করলে এক এক ভাগকে পর্ব বলে। বৃদ্ধাঙ্গ লির কেবল দুটি পর্ব ভেতরের দিকে। একটা দাগ অনুযায়ী গোড়ার পর্বকে অনেকে তিনটি বলেন। বৃদ্ধাঙ্গুলির মোট দুটি, চারটি আঙুলের তিনটি করে বারোটি মোট চোদ্দটি পর্ব। এই এক একটি পর্বে পৃথক পৃথক স্থান বিচার আছে সামুদ্রিক মতে।
১ । চিহ্নিত স্থান-ইচ্ছাশক্তির স্থান।
২ । চিহ্নিত স্থান-বিচার শক্তির স্থান।
৩। চিহ্নিত স্থান- মান অপমান স্থান।
৪। চিহ্নিত স্থান- পদমর্যাদা ও দৈহিক শক্তি।
৫। চিহ্নিত স্থান- মানসিক বল ও চিন্তা।
৬। চিহ্নিত স্থান-ভক্তির স্থান।
৭। চিহ্নিত স্থান- আকর্ষণের স্থান।
৮। চিহ্নিত স্থান- তীর্থ ভ্রমণের স্থান।
১। চিহ্নিত স্থান-ঐশ্বর্য ও দারিদ্রের সূচক।
১০। চিহ্নিত স্থান- নানা বিচারশক্তির ও বিচার ক্ষমতার স্থান।
১১। চিহ্নিত স্থান- সাধারণ শক্তির স্থান।
১২। চিহ্নিত স্থান- সাহস ও মনোবলের স্থান।
১৩। চিহ্নিত স্থান- রাজ-মন্ত্রীত্বের যোগের স্থান।
১৪। চিহ্নিত স্থান- মানসিক তেজের স্থান।
ঐসব স্থান উন্নত, প্রশস্ত হলে ও তাতে কাটাকাটি রেখা না থাকলে তা শুভ বোঝায়। অপ্রশস্ত, নিচু ও কাটাকাটি দাগ থাকলে তা কুফল নির্দেশ করে।