প্রদোষ ব্রত

প্রদোষ ব্রত

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি মাসের শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই ব্রত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এটিকে Pradosh Vrata প্রদোষ ব্রত বলা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে সূর্যাস্তের আগের ও পরের দেড় ঘণ্টা সময়কে বিশেষ পবিত্র মনে করেন। প্রদোষ ব্রতে সারা দিন উপবাস করে ওই বিশেষ সময়ে শিবের পূজা করা হয়। পূজক রুদ্রাক্ষ ও বিভূতি ধারণ করে অভিষেক, চন্দন, বিল্বপত্র, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য দিয়ে শিবের পূজা করেন।

শুক্লপক্ষের অথবা কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথি প্রদোষ ব্রত উদযাপন এর জন্য সঠিক বলে বিবেচিত হয়। সপ্তাহের যে বারে এই তিথি পড়ে, সেই বারের নাম অনুযায়ী প্রদোষ ব্রত চিহ্নিত করা হয়। পুরাণকথা মতে, দক্ষ প্রজাপতি তার ২১ জন মেয়ের সঙ্গে চন্দ্রের বিবাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু চন্দ্র তার সমস্ত স্ত্রীকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতেন না। রোহিনীর ভুবন মোহিনী রূপে তিনি আকৃষ্ট ছিলেন।

তখন অন্যান্য স্ত্রীরা এই বিষয়ে বাবার কাছে অভিযোগ জানালে দক্ষ জামাইকে অভিশাপ দেন যে চন্দ্র ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হবেন। এরপর চন্দ্র এই ব্রত উদযাপন করে শিব কে প্রশ্ন করে শাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। যেখানে চন্দ্রদেব শিবের উপাসনা করেছিলেন, সেই জায়গায় আছো সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের রূপে বিরাজমান। শুধু তাই নয়, শাপগ্রস্থ চন্দ্রকে মর্যাদা প্রদান করার জন্য নিজের মস্তকে ধারণ করে রেখেছিলেন তাকে স্বয়ং শিব।

প্রদোষ তিথিটি শনিবার পড়লে সেটিকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরে শনি প্রদোষ বিশেষভাবে উদ্‌যাপিত হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, উজ্জয়িনীর রাজা চন্দ্রসেন ছিলেন শিবভক্ত। তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক মণি পেয়েছিলেন। চন্দ্রসেনের শত্রু রাজা রিপুদমন ও রাজা সিংহাদিত্য এই মণির লোভে উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন।

এই সময় চন্দ্রসেন শিবপূজা করছিলেন। শ্রীখর নামে এক কৃষকপুত্র রাজার মুখের শিবের নাম শুনে তার কাছে আসেন। কিন্তু রাজরক্ষীরা তাকে সরিয়ে দেন। শহরের বাইরে শিপ্রা নদীর তীরে শ্রীখর শিবের নাম করতে থাকেন। বৃধি নামে এক পুরোহিত সেই খবর জানতে পেরে নিজের পুত্রগণের অনুরোধে শিপ্রা নদীর তীরে শিবের নাম করতে যান।

এই সময় শত্রু রাজারা উজ্জয়িনী আক্রমণ করেন। এই সময়টি ছিল শনিবার ও ত্রয়োদশী তিথি।ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত অদৃশ্য অসুর দূষণের সাহায্যে তারা উজ্জয়িনী লুণ্ঠন করে শিবভক্তদের আক্রমণ করেন। ভক্তদের আকূতি শুনে শিব মহাকালের রূপে উপস্থিত হন এবং চন্দ্রসেনের শত্রুদের ধ্বংস করেন। শ্রীখর ও বৃধির অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে রাজ্যের প্রধান দেবতারূপে অবস্থান করতে সম্মত হন।

সেই থেকে মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে শিব ও পার্বতী উজ্জয়িনীতে অবস্থান করছেন। শনি প্রদোষ ব্রত করলে শিবভক্তেরা মৃত্যুভয় ও রোগব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পান এবং প্রচুর ধনসম্পত্তি লাভ করেন। তাই এই ব্রতের মাহাত্ম্য সত্যিই অপরিসীম। সকালে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে শিবলিঙ্গকে গঙ্গা জল দিয়ে অভিষেক করতে হয়। এরপর মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করে ফুল বেলপাতা, চাল, ধুপ, প্রদীপ, সুপারি অর্ঘ্য করতে হয় দেবাদিদেব মহাদেব কে।

সায়ান্নে তার পরিবারকে পুজো করা হয়। প্রদোষ কথাটির অর্থ হল সন্ধ্যা। এই সময়ের মধ্যে হরো গৌরী কে ওম নমঃ শিবায় মন্ত্র টি ১০৮ বার জপ করে শোনাতে হবে। শিবকে অভিষেক করাতে হবে প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ দিয়ে। যদি যজ্ঞের আয়োজন করা হয় তাহলে, অগ্নিতে দিতে হবে ক্ষীর আহুতি। যজ্ঞ সমাপ্ত হলে শাস্ত্র মেনে ব্রাহ্মন ভোজন করাতে হবে।