মনুষ্য জীবন বাস্তু শক্তির দ্বারা সঞ্চালিত ও প্রবাহিত হয়। বাস্তু শাস্ত্রের সিদ্ধান্তের মুখ্য উদ্দেশ্য হল নানা স্থানে, জীবনে এমনকি সব জায়গায় বাস্তু শক্তি প্রবাহের অবাধ গতি প্রবাহিত ও সঞ্চালিত করার চেষ্টা করতে হয়। আবার, যে জায়গায় বাড়ি অথবা বাড়ির বাইরে বাস্তু শক্তি প্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হয় সেখানে ব্যক্তি পরিবার ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না। দারিদ্রতা, অসুখ, গৃহ অশান্তি, স্বাস্থ্যহানি ইত্যাদির একটাই মূল কারণ হল: বাস্তু শক্তি প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস এর কথা বলা হচ্ছে—যা মেনে চলতে পারলে ঘর ও বাইরে এই দুই জায়গায় বাস্তু শক্তি প্রবাহ ক্রমাগত জারী রাখতে পারলে জীবনসুখী ও নীরোগ হয়ে গড়ে উঠবে।
যোগ এর অভ্যাসে দেহের কৃশতা আসে। দেহের স্থূলতা ও এলোমেলোভাবে দূর হয়ে শরীর সুন্দর ও সুডৌল ভাবে গঠন করা যায়। চেহারায় সব সময় একটা চমক আসে।
বাড়ির মধ্যস্থলকে ব্রহ্মস্থান বলা হয়। ঐ জায়গাটি খোলা এবং পরিষ্কার রাখতে পারলে ভালো হয়। ঐ স্থান থেকে পুরো বাড়িটির, বাস্তু শক্তি পাওয়া যায়।
দক্ষিণ দিকটি হাল্কা ও খালী হওয়ার জন্যে বাড়ির শক্তির উৎসের ভারসাম্য কমতে থাকে। শক্তির উৎস ঠিক রাখার জন্যে পালঙ্কের মাথার দিকটি দক্ষিণ দিক করে রেখে দেওয়ালের সাথে সেঁটে বা সাটিয়ে রাখুন।
আগ্নেয় কোণ (দক্ষিণ-পূর্ব) এর দিকে রান্না ঘর হওয়ার জন্যে পুরো বাড়িতে শুভ শক্তি পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রবাহিত হয়। শক্তির সংরক্ষণ ও ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই দরকার।
বাড়ির ঈশান কোণ (পূর্ব-উত্তর) বাস্তু শক্তির সর্বোত্তম স্থান বলে মনে করা হয়। এখান থেকে প্রবাহিত হওয়া জৈব-বিদ্যুত চুম্বকীয় শক্তি পুরো বাড়িটিতে শক্তি উৎপন্ন করে। এর জন্যে এই জায়গাটি খোলা, পরিষ্কার ও পবিত্র ভাবে রাখতে পারলে ভালো হয়।
শৌচালয়, রান্নাঘর এবং পুজো ঘর—একটার সঙ্গে আর একটার খুব কাছাকাছি করে তৈরী করবেন না। কারণ এতে অশুভ শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
খাবার ঘরটি সবসময় পশ্চিম দিকে রাখুন এতে শুভ শক্তির সাথে সাথে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।
বাড়িতে উত্তর দিকে বেশী তথা ভেতরের দিকে খোলা যায়। এমন জানলা তৈরী করাতে পারলে ভালো হয় কারণ এতে শাক্ত বৃদ্ধি. হয়। ঘর ও পরিবারে আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে।
শুভ শক্তির জন্যে বাড়ির ভূমিতল ঈশান কোণের দিকে ঢালু রাখতে পারলে ভালো হয়। বাড়িতে যে দিক দিয়ে জল বয়ে যায় সেই দিকটি এই দিকে করাতে পারলে ভালো হয়।
বাড়ি তৈরী করার সময় এই দিকে লক্ষ্য রাখুন যাতে আপনার ঘর এমন জায়গায় তৈরী করাবেন যেখানে সূর্যের প্রকাশ ও বায়ু .চলাচল খুব বেশী মাত্রায় আপনার ঘরে প্রবেশ করতে পারে।
ঈশান কোণে খাবার জলের জায়গা থাকার ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে আপনার বাড়িতে শক্তি উৎপন্ন হোতে পারে।
আপনার বাড়িতে পর্যাপ্ত ও উত্তমভাবে বাস্তু শক্তি বিচরণ ও সংরক্ষণ হওয়ার কারণে শৌচালয় দক্ষিন, আগ্নেয় (দক্ষিণ-পূর্ব) পশ্চিম ও বায়ুকোণে তৈরী করাতে পারলে ভালো হয়। স্নান ঘর পূর্ব ও উত্তর দিকে স্থিত হওয়ার ফলে বাড়িতে বাস্তু শক্তি কখনই কম হয় না।
শুভ শক্তির জন্যে বাড়িটি বর্গাকারে, লম্বা চওড়া অর্থাৎ বর্গাকারে আবার, প্রস্থ থেকে দৈর্ঘ্য পর্যন্ত প্রায় দ্বিগুণ হোতে পারলে ভালো হয়।
বাড়িতে কখনই কোন নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র রাখবেন না। ঝাড়ুটি সব সময় ঠিক জায়গায় শুইয়ে রাখবেন। এতে বাস্তু শক্তি কখনই বাধা প্রাপ্ত হবে না।
বাড়িতে কোন সময় কারোর দিকে আঙুল তুলে কখনই কোন ইশারা করবে না। কারণ এতে আপনার দিকে অশুভ শক্তির বিচরণ। হোতে থাকে।
পার্টি ও ফাংশানের ফলে বেঁচে যাওয়া খাবার খাওয়ার ফলে সংসারে দারিদ্রতার সৃষ্টি হোতে পারে। ভাগ্য প্রতিকূল হোয়ে পড়ে।
ভাঙা কাঁচের জিনিসপত্র খাবার দেওয়ার জন্যে অশুভ শক্তির বিচরণ হোতে থাকে। এতে আপনার আত্মবিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে।
বাড়িতে অতিথি এলে তাদের চা ও জল পরিবেশন করার সময় কেতলী ও জগের মুখ যেন অতিথিদের দিকে না থাকে। এর ফলে উৎপন্ন হওয়া অশুভ শক্তি অতিথিদের বিরক্তির কারণ হোতে পারে।
খাবার পর নোংরা বাসন শয়নকক্ষে ফেলে রাখবেন না। এতে বাস্তশক্তি দূষিত হয়ে পড়ে। তার ফলে পরিবারের মধ্যে অসুখ বিসুখ ও অলসতা লেগে থাকে।
বাড়ির ছাতে কখনও কোন ফালতু জিনিস বা ভাঙা জিনিস রাখবেন না। বাড়িতে আর্থিক কষ্টের সাথে সাথে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। ছাতের ওপর ফালতু জিনিস রাখার ফলে শুভ শক্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাধা প্রাপ্ত হয়।
বাড়ির প্রধান প্রবেশ দ্বারে কখনই কোন বিদ্যুতের মিটার লাগাবেন না। বাড়িতে সিঁড়ির নীচে শৌচালয়, বাথরুম, মীটর, মোটর গাড়ি ইত্যাদি রাখবেন না। এর ফলে বাস্তু শক্তির ভারসাম্য রাখা সম্ভব হয় না। অশুভ শক্তি প্রবাহের ফলে বাড়ির শান্তি নষ্ট হয়।
মদ খাওয়ার সময় মদের গ্লাসের শেষটুকু অর্থাৎ গ্লাসে যতটুকু থাকবে পুরোটাই খেয়ে ফেলার চেষ্টা করুন এবং তা যেন কোনভাবেই ভুল না হয়। এটা আপানার জন্যে খুবই শুভফল প্রাপ্ত হবে।
শয়নকক্ষে সুন্দর নয়নাভিরাম সারিবদ্ধ পর্বতের ছবি, বরফে ঢাকা পাহাড় ইত্যাদির ছবি যা পারিবারিক জীবনে স্থিরতা নিয়ে আসে। – বৈবাহিক ও দাম্পত্য জীবন সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।
বাড়িতে জলের ট্যাঙ্কটি ছাদের উত্তর-পশ্চিম কোণে রাখুন। এর ফলে বাস্তু শক্তির ভারসাম্য বজায় থাকবে। মনে রাখবেন যেখানে ট্যাঙ্কটি রাখা হবে সেই দিকটি দক্ষিম পশ্চিম দেওয়ালের থেকে কম উঁচু যেন না হয়।
সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্রাদি যদি মাটিতে রাখা হয় তবে বাস্তু শক্তির ভারসাম্য বজায় থাকে না।
বাড়ির দক্ষিণদিকে জল কখনই রাখবেন না। বাসন ও কাপড় এই দিকে কখনই ধোবেন না। এর ফলে অশুভ শক্তি উৎপন্ন এবং বাস্তু শক্তির ভারসাম্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেবে।
বাঁশের কঞ্চি, বাঁশি, ছাদের বীমের অশুভ শক্তি দুষ্ট প্রভাব থেকে রক্ষা করে। বাঁশিকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয়। ডায়নিং হলে দর্পণ লাগাতে পারলে খুবই ভালো হয়। এমন করলে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুভ শক্তির সৃষ্টি হবে।